পরিসংখ্যান

অন্তর প্রাক্কলন

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পরিসংখ্যান - পরিসংখ্যান ২য় পত্র | NCTB BOOK

অন্তর প্রাক্কলন (Interval Estimation)

অন্তর প্রাক্কলন হলো পরিসংখ্যানের এমন একটি পদ্ধতি যেখানে জনসংখ্যার কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের মান একটি সীমার (interval) মধ্যে নির্ধারণ করা হয়। এটি বিন্দু প্রাক্কলনের তুলনায় বেশি নির্ভুল এবং সঠিক কারণ এটি একটি সম্ভাব্য সীমার মধ্যে ফলাফল প্রদান করে।


অন্তর প্রাক্কলনের ধারণা

  • অন্তর প্রাক্কলনের মাধ্যমে প্রাক্কলিত মান একটি নিম্ন সীমা এবং উচ্চ সীমার মধ্যে থাকে।
  • এই প্রক্রিয়ায় "বিশ্বাসযোগ্যতার স্তর" (Confidence Level) উল্লেখ করা হয়, যা নির্ধারণ করে যে জনসংখ্যার প্রকৃত মান এই সীমার মধ্যে কত শতাংশ নিশ্চিতভাবে থাকবে।

অন্তর প্রাক্কলনের উপাদান

১. নিম্ন সীমা (Lower Bound):

সীমার নিচের মান, যা একটি প্রাক্কলনের সর্বনিম্ন সম্ভাব্য মান।

২. উচ্চ সীমা (Upper Bound):

সীমার উপরের মান, যা একটি প্রাক্কলনের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মান।

৩. বিশ্বাসযোগ্যতার স্তর (Confidence Level):

সাধারণত ৯৫% বা ৯৯% ব্যবহার করা হয়।

  • ৯৫% বিশ্বাসযোগ্যতার স্তর মানে ৯৫% নিশ্চিত যে প্রাক্কলিত সীমার মধ্যে জনসংখ্যার প্রকৃত মান থাকবে।

৪. ত্রুটি সীমা (Margin of Error):

প্রাক্কলিত সীমার মান নির্ধারণে যে পরিমাণ ত্রুটি থাকতে পারে।


অন্তর প্রাক্কলনের সূত্র

১. জনসংখ্যার গড়ের জন্য অন্তর প্রাক্কলন:

যদি জনসংখ্যার মান বিচ্যুতি (standard deviation) জানা থাকে:
\[
\bar{x} \pm Z \cdot \frac{\sigma}{\sqrt{n}}
\]

২. নমুনার গড়ের জন্য অন্তর প্রাক্কলন:

যদি মান বিচ্যুতি অজানা থাকে:
\[
\bar{x} \pm t \cdot \frac{s}{\sqrt{n}}
\]

যেখানে:

  • \( \bar{x} \): নমুনার গড়
  • \( Z \): Z-স্কোর (বিশ্বাসযোগ্যতার স্তরের জন্য)
  • \( t \): t-স্কোর (বিশ্বাসযোগ্যতার স্তরের জন্য)
  • \( \sigma \): জনসংখ্যার মান বিচ্যুতি
  • \( s \): নমুনার মান বিচ্যুতি
  • \( n \): নমুনার সংখ্যা

উদাহরণ

উদাহরণ ১: জনসংখ্যার গড়ের জন্য অন্তর প্রাক্কলন

ধরা যাক, একটি এলাকার নমুনার গড় আয় $৫০,০০০, জনসংখ্যার মান বিচ্যুতি \( \sigma = ৫,০০০ \), এবং নমুনার আকার \( n = ১০০ \)।
৯৫% বিশ্বাসযোগ্যতার স্তরে, \( Z = ১.৯৬ \)।

\[
\bar{x} \pm Z \cdot \frac{\sigma}{\sqrt{n}}
\]
\[
৫০,০০০ \pm ১.৯৬ \cdot \frac{৫,০০০}{\sqrt{১০০}}
\]
\[
৫০,০০০ \pm ১.৯৬ \cdot ৫০০ = ৫০,০০০ \pm ৯৮০
\]
অতএব, প্রাক্কলিত আয় $৪৯,০২০ থেকে $৫০,৯৮০ এর মধ্যে।


উদাহরণ ২: নমুনার গড়ের জন্য অন্তর প্রাক্কলন

ধরা যাক, নমুনার গড় $২০০, নমুনার মান বিচ্যুতি \( s = ২০ \), নমুনার আকার \( n = ২৫ \), এবং ৯৫% বিশ্বাসযোগ্যতার স্তরে \( t = ২.০৬৪ \)।

\[
\bar{x} \pm t \cdot \frac{s}{\sqrt{n}}
\]
\[
২০০ \pm ২.০৬৪ \cdot \frac{২০}{\sqrt{২৫}}
\]
\[
২০০ \pm ২.০৬৪ \cdot ৪ = ২০০ \pm ৮.২৫৬
\]
অতএব, প্রাক্কলিত আয় $১৯১.৭৪৪ থেকে $২০৮.২৫৬ এর মধ্যে।


অন্তর প্রাক্কলনের ব্যবহার

১. অর্থনীতি:

মুদ্রাস্ফীতি, গড় বেতন ইত্যাদির প্রাক্কলন।

২. ব্যবসা:

নতুন পণ্যের চাহিদা নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।

৩. গবেষণা:

পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে ব্যবহার হয়।

৪. স্বাস্থ্য:

রোগীর গড় বয়স বা ওজন প্রাক্কলনে।


সারসংক্ষেপ

অন্তর প্রাক্কলন হলো একটি নির্ভুল এবং কার্যকর পদ্ধতি যা নমুনার তথ্য ব্যবহার করে জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। এটি ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Promotion